টাইম ম্যানেজমেন্ট: কর্মজীবনে সফলতার মূলমন্ত্র!

টাইম ম্যানেজমেন্ট বা সময় ব্যবস্থাপনা এমন একটি দক্ষতা যেটা আমাদের কর্মজীবন ও ব্যক্তিজীবনে সফলতার মূলমন্ত্র হিসেবে কাজ করে। সঠিক টাইম ম্যানেজমেন্ট দক্ষতার অভাবে আপনার পরিশ্রম, মেধা এবং স্কিল সবকিছুই বৃথা যেতে পারে! এজন্যই অতি জনপ্রিয় একটি প্রবাদ লোকমুখে আজও বহুল ব্যবহৃত, “সময় গেলে সাধন হবে না!”

আপনি যদি কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন, তাহলে আপনার ক্যারিয়ারের সফলতা নির্ভর করছে টাইম ম্যানেজমেন্ট বা সময় ব্যবস্থাপনা দক্ষতার উপরে। আর আপনি যদি কোনো প্রতিষ্ঠানের মালিক হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার প্রতিষ্ঠানের সফলতা নির্ভর করছে আপনার টাইম ম্যানেজমেন্ট দক্ষতা ও প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের টাইম ম্যানেজমেন্ট কীভাবে করা হচ্ছে সেটার উপর। তাই সার্বিকভাবে বলাই যায়, একজন মানুষের কর্মজীবনে সফলতার মূল মন্ত্রই হলো, সঠিক টাইম ম্যানেজমেন্ট বা সময় ব্যবস্থাপনা।

তাই আমারা আজকে আলোচনা করবো, সময় ব্যবস্থাপনা কী এবং কর্মজীবনে এর গুরুত্ব কতটুকু? পাশাপাশি আমরা কর্মজীবনে টাইম ম্যানেজমেন্ট দক্ষতা বাড়ানোর কিছু অসাধারণ কৌশল সম্পর্কে জানবো, যেগুলোর সঠিক ও সফল প্রয়োগ আপনার জীবন বলদে দেবে! এছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠানের এমপ্লয়িদের সময় ব্যবস্থাপনায় মালিক বা এইচআর ম্যানেজারদের করণীয় সম্পর্কেও ধারণা নেবো এই লেখায়।

আজকের ব্লগে যা থাকছে-

টাইম ম্যানেজমেন্ট বা সময় ব্যবস্থাপনা কী?

টাইম ম্যানেজমেন্ট বা সময় ব্যবস্থাপনা হলো, আমাদের প্রতিদিনের প্রতিটি কাজের জন্য সঠিকভাবে সময় ভাগ করে নেয়া এবং সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ সম্পন্ন করার করা। পরবর্তীতে আরও কৌশলি হয়ে কম সময়ে কাজগুলো সম্পাদন করার চেষ্টা করা। একদম সহজ করে বললে, সময়ের কাজ সময়ে করা এবং সময়কে কাজে লাগানোকেই টাইম ম্যানেজমেন্ট বা সময় ব্যবস্থাপনা বলে।

আসলে সময় ব্যবস্থাপনা হলো, আমাদের প্রত্যাহিক জীবনের কিছু অভ্যাস ও গুণের সমষ্টি যেগুলো আমাদের কর্মজীবন ও ব্যক্তিজীবনের কাজের মধ্যে সমন্বয় তৈরি করে। আর এই সমন্বয় আমাদের কর্মজীবন ও ব্যক্তিজীবনকে সমৃদ্ধ ও সফল করে।

তাই আমাদের প্রত্যাহিক জীবনের সেই গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাস ও গুণগুলো সম্পর্কে জানতে হবে এবং সেগুলোর প্রয়োগ করতে হবে।

কর্মজীবনে টাইম ম্যানেজমেন্ট দক্ষতা বাড়ানোর কৌশল

আমরা এখন কর্মজীবনে টাইম ম্যানেজমেন্ট দক্ষতা বাড়ানোর জন্য প্রত্যাহিক জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাস নিয়ে আলোচনা করবো। এমন কিছু অসাধারণ কৌশল সম্পর্কে জানবো, যেগুলোর সঠিক ও সফল প্রয়োগ আমাদের জীবন বলদে দিতে পারে!

লক্ষ্য নির্ধারণ করুন হিসাব কষে!

পুরো কর্মজীবনের হোক আর আজকের কোনো নির্দিষ্ট কাজের হোক, লক্ষ্য নির্ধারণ করুন হিসাব কষে। কারণ, সঠিক ও যৌক্তিক লক্ষ্য সহজে অর্জন করা যায়। তাই লক্ষ্য নির্ধারণ করতে চৌকস হতে হবে। এজন্য জনপ্রিয় একটি মেথড হলো স্মার্ট (S.M.A.R.T) মেথড। স্মার্ট মেথড ব্যবহার করে লক্ষ্য নির্ধারণ করুন।

S for Specific (সুনির্দিষ্ট): লক্ষ্যটি হতে হবে সুনির্দিষ্ট।
M for Mesurable (পরিমাপযোগ্য): লক্ষ্যটি সহজে পরিমাপযোগ্য হতে হবে।
A for Attainable (অর্জনযোগ্য): লক্ষ্যটি আপনার দক্ষতা দ্বারা অর্জনযোগ্য হতে হবে।
R for Relevant (প্রাসঙ্গিক): প্রতিটি লক্ষ্যই আপনার কর্মজীবনের সাথে প্রাসঙ্গিক হতে হবে।
T for Time-bound (নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট কাজ করা): টাইম ম্যানেজমেন্ট এর মাধ্যমে সময়ের কাজ সময়ে করতে হবে।

গুরুত্ব অনুসারে কাজের তালিকা তৈরি করুন

প্রতিদিনের কাজের তালিকা তৈরি করার সময় কোন কাজটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ সেটা আগে রাখুন। প্রয়োজনে কাজগুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভাগ করুন। এখানেও একটি মেথড (The Eisenhower Matrix) বা পরিকল্পনা পদ্ধতি ফলো করতে পারেন।
Important and urgent (খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি কাজ): মানে এখনই করতে হবে।
Important but not urgent (গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু খুব জরুরি কাজ নয়): এটি তার পরে করুন।
Urgent but not important (জরুরি কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ নয়): এমন কাজগুলো করলে তৎক্ষণাত করুন আর না করতে চাইলে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলুন।
Not urgent and not important (অপ্রয়োজনীয় কাজ): এই কাজগুলো করবেন না। এগুলো করলে টাইম ম্যানেজমেন্ট করতে পারবেন না। খেয়াল রাখবেন জীবনে সবকিছু করা যায় না এবং করতেও হয় না।

প্রতিদিনের কাজের তালিকা আগের রাতেই করে রাখুন

প্রতিদিনের কাজের তালিকা তৈরি করতে হবে। প্রয়োজনে আগের রাতেই কাজটি করে ফেলুন। মোবাইলের নোট প্যাড বা কাগজে লিখে রাখুন। দিন শুরু করুন তালিকা দেখে, দিন শেষ করুন তালিকা দেখে। কোন কাজটি বাকি থাকলো এবং কেনো থাকলো সেটা নিয়ে চিন্তা করুন। দেখবেন টাইম ম্যানেজমেন্ট বা সময় ব্যবস্থাপনা দক্ষতা দিনদিন বাড়বে।

টাইম ম্যানেজমেন্ট দক্ষতা বাড়াতে টাইম ট্র‍্যাকিং করুন

কাজ নির্দিষ্ট সময়ে শুরু ও শেষ করতে টাইম ট্র্যাকিং করা শুরু করুন। কোন কাজটি করতে কতটুকু সময় লাগছে দেখুন। বেশি লাগলে, কেনো বেশি লাগছে বোঝার চেষ্টা করুন। আরও কম সময়ে করার চেষ্টাও করুন। এই কাজের জন্য কিছু ডিজিটাল টুল পাওয়া যায়, ব্যবহার করে সুফল নিতে পারেন।

কাজ জমিয়ে পরে করার কথা ভুলে যেতে হবে

আজকে থেকে কাজ জমিয়ে রাখাকে ভুলে যেতে হবে। পরে করবো ভাবনাটি একটি রোগ! পরে করবো ভাবনাটি আপনার কর্মজীবনের সবচেয়ে বড় শত্রু হতে পারে। এটি টাইম ম্যানেজমেন্ট দক্ষতা বৃদ্ধিরও শত্রু। তাই কাজ জমিয়ে রাখা যাবে না। কাজ জমিয়ে রেখে বিশ্রাম নেয়ার থেকে কাজ শেষ করে বিশ্রাম নেয়া শুরু করুন। দেখুন কর্মজীবন আর ব্যক্তিজীবন কত সুন্দর হয়ে ওঠে!

কাজের মধ্যে ছোট ছোট বিরতি নিতে হবে

একটানা কাজ করবেন না। এটি ক্লান্তিকর এবং আপনার কর্মজীবনের জন্য ক্ষতিকর। কাজের মাঝে ছোট ছোট বিরতি নিন। ধরুন, এক ঘন্টা কাজে ৫ – ১০ মিনিট বিরতি নিন। লম্বা সময় কাজ করলে ২০ – ৩০ মিনিটের বিরতি নিন। হাঁটুন, চা বা কফি পান করুন, পানি পান করুন। এতে আপনার কাজের গতি আরও বাড়বে। আপনার শরীরও ভালো থাকবে। এটি আপনার টাইম ম্যানেজমেন্ট দক্ষতা বাড়াতে সহায়তা করবে।

মনোযোগ ধরে রাখতে কিছু কাজ/জিনিস এড়িয়ে চলুন

বেশি প্রয়োজন না হলে কাজ করার সময় হাতের কাছে মোবাইল ফোন রাখবেন না। রাখলেও সাইলেন্ট মোডে রাখুন। সোশ্যাল মিডিয়ায় লগইন করবেন না। এই কাজগুলো আপনার টাইম ম্যানেজমেন্ট এর বারোটা বাজাতে পারে। নিজের অজান্তেই আপনি অপ্রয়োজনীয় কাজে নিজেকে ব্যস্ত করে ফেলবেন। বর্তমান সময়ে কর্মক্ষেত্রে টাইম ম্যানেজমেন্ট বা সময় ব্যবস্থাপানার বড় শত্রু সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতি অদম্য আকর্ষণ!
মনোযোগ ধরে রাখতে অপ্রাসঙ্গিক গভীর চিন্তা থেকে নিজেকে বিরত রাখুন। অফিসে কাজের পরিবেশ নিজে বজায় রাখুন এবং মালিক বা ম্যানেজমেন্টকে কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করতে বলুন।

এমপ্লয়িদের টাইম ম্যানেজমেন্ট দক্ষতা বাড়াতে মালিক/এইচআর ম্যানেজার যা করবেন

আপনি যদি একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক হন বা উদ্যোক্তা হন বা কোনো কোম্পানির এইচআর ম্যানেজার হন, তাহলে আপনাকে নিজের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের এমপ্লয়িদের টাইম ম্যানেজমেন্ট দক্ষতা বাড়ানোর দিকে নজর দিতে হবে। আপনি এইচআর সফটওয়্যার ব্যবহার করে এই কাজটি সহজেই করতে পারবেন।
এক্ষেত্রে আপনাকে কর্মী ব্যবস্থাপনার স্মার্ট সল্যুশন খুঁজে রেব করতে হবে। আর কর্মী ব্যবস্থাপনার ওয়ান-স্টপ সল্যুশন নিয়ে বাংলাদেশে হাজির হয়েছে এইচআর ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার হাজিরা। একজন মালিক বা এইচআর ম্যানেজার হিসেবে এমপ্লয়িদের টাইম ম্যানেজমেন্ট দক্ষতা বাড়াতে হাজিরা’য় আছে-

  • প্রতিদিন কর্মীদের উপস্থিতির রেকর্ড সুবিধা
  • ইন-আউট টাইম রেকর্ড সুবিধা
  • রিমোট অফিস ম্যানেজমেন্ট সুবিধা
  • কাজের শিফট ম্যানেজমেন্ট সুবিধা
  • ভিন্ন ভিন্ন ওয়ার্ক স্টেশন ম্যানেজমেন্ট ‍সুবিধা
  • লিভ ম্যানেজমেন্টের সুবিধা
  • এমপ্লয়ি রিপোর্টস দেখার সুবিধা
একটি অ্যাপের মাধ্যমে কর্মী ব্যবস্থাপানাকে সহজ করতে আজই ফ্রিতে ডাউনলোড করুন – হাজিরা (অ্যান্ড্রয়েড)। চাইলে হাজিরা’র আইওএস অ্যাপ ডাউনলোড করতে পারেন।

টাইম ম্যানেজমেন্ট দক্ষতা আপনাকে কী উপহার দেবে?

কর্মজীবনে সঠিক টাইম ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে আমরা অনন্য সাধারণ কিছু জিনিস অর্জন করতে পারি। যেগুলো আমাদের জীবনকে সহজ ও সুন্দর করে। যেমন-

  • পেশাগত কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারি।
  • পেশাগত ও মানসিক চাপ কমিয়ে ব্যক্তিজীবনকে সুন্দর করতে পারি।
  • কর্মজীবন ও ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে পারি।
  • কর্মজীবনে নতুন নতুন সুযোগ সৃষ্টি করতে পারি।
  • কর্মজীবনে ধারাবাহিক সফলতা ও উন্নতি করতে পারি।
  • আর সফল কর্মজীবন মানেই সুখি সমৃদ্ধ জীবন!

এভাবেই আমাদের কর্মজীবন ও ব্যক্তিজীবন, দুই ক্ষেত্রেই ছোট ছোট মিশন পার হয়ে নির্দিষ্ট ভিশন বা লক্ষ্য অর্জনের দিকে ছুটতে হয়।

টাইম ম্যানেজমেন্ট ছাড়া জীবনের অর্জনগুলোও যেন হতাশা!

আমাদের কর্মজীবন বা অফিসে থাকে, ডেডলাইন অনুযায়ী কাজ শেষ করার তাগাদা। আর আমাদের ব্যক্তিজীবনে থাকে, কর্মজীবনের সফলতা দিয়ে সঠিক সময়ের ভেতরে সমৃদ্ধি অর্জনের তাগাদা। তাহলে বোঝাই যাচ্ছে, কোন কাজ শেষ করা বা জীবনে কিছু অর্জন করাটাই শেষ কথা নয়! আপনাকে সেই কাজ বা অর্জনটি সঠিক সময়ের মধ্যে করতে হবে। তা না হলে সেই অর্জনটি হতাশায় পরিণত হতে পারে! কারণ, অসময়ের অর্জন আপনাকে পরিপূর্ণ তৃপ্তি দেবে না। তাই তো প্রাচীন প্রবাদ আছে,
“সময়ের এক ফোঁড় অসময়ের দশ ফোঁড়”

সাম্প্রতিক পোস্টসমূহ
সাবস্ক্রাইব করুন
নতুন ফিচার ও অফারের আপডেট পেতে হাজিরা’র সাথে কানেক্ট থাকুন।